
আমরা ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখি, আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বাইরে দেশে সরাসরি কাজ করতে গেলে তারা টেকনিশিয়ান হিসেবে নিয়োজিত থাকছে এবং যদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পদে চাকরি পেতে চায়, তাহলে সেখানে মেকআপ ডিপ্লোমা কোর্স সম্পূর্ণ করে সেই পদে যেতে হচ্ছে?
একবারও কি ভেবে দেখেছেন এটা কেন হচ্ছে?
আসুন উদাহরণ দিলে বুঝবেন: যেখানে ভারত থেকে একজন শিক্ষার্থী ৩ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স সম্পূর্ণ করে বাইরে দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পদেই চাকরি পাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ৪ বছর পড়েও টেকনিশিয়ান থেকে যাচ্ছে, অন্যথায় মেকআপ কোর্স করতে হচ্ছে।
হয়তো অনেকের মতো আমিও ভেবেছিলাম এখানে সিলেবাসের অনেক বড় হেরফের হয়তো রয়েছে, যার কারণে এই সমস্যা। কিন্তু না!!!
এখানে বড় বাধা সিলেবাস নয়, বড় বাধা হলো ভাষাগত সমস্যা এবং পড়ানোর ধরনে।
আসুন এই বিষয়ে আরেকটু আলোচনা করা যাক:
১. আমাদের ডিপ্লোমা কোর্সের সিলেবাসের সাথে প্রায় অন্যান্য দেশের সিলেবাসের অনেকটাই মিল আছে, তবে পড়ানোর ধরনটা অন্য দেশ ও বাংলাদেশের মধ্যে পুরোপুরি ভিন্ন। সেখানে প্র্যাকটিক্যালকে ফোকাস দেওয়া হলেও এখানে ফোকাস করা হয় সিজিপিএ-কে।
সলিউশন: তবে যদি প্র্যাকটিক্যালকেই সিজিপিএ-তে কনভার্ট করা যেত, সর্বোচ্চ উপকৃত হতো দেশের ডিপ্লোমা সেক্টর।
যেকোনো শিক্ষার্থী প্র্যাকটিক্যাল কাজ শিখবে, এরপর সেটা কর্মস্থলে প্রয়োগ করবে, তারপর তার চিন্তা থাকবে উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে। এতে প্রয়োজন হবে ডুয়েট-এর মত একাধিক উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান, যেখানে মাত্র ২ বছর নয়, যেকোনো ন্যূনতম ৮-১০ বছর ডিপ্লোমা পাসকৃত শিক্ষার্থীর জন্য বিএসসি উন্মুক্ত করা উচিত। এখন অনেকের মনে হতে পারে ৮-১০ বছর কেন দরকার?? আসুন বলছি কেন দরকার।
ডিপ্লোমা মূলত করানোই হয় কর্মমুখীতায় ফোকাস দিয়ে। তাহলে একজন শিক্ষার্থী যদি ডিপ্লোমা পাস করে ডুয়েটের এই নিয়মের কারণে কর্মমুখীতায় ফোকাসই করতে না পারে, তাহলে এই ডিপ্লোমার অর্থ কী? কেন অতিরিক্ত দুই বছর তার সময় নষ্ট করলো সে? যদি সে সরাসরি বিএসসি-ই চিন্তা করে, তাহলে ইন্টারমিডিয়েটের চাইতে ২ বছর বেশি সময় দিয়ে ডিপ্লোমা পড়ার তো কোনো দরকার ছিল না। বরং নিয়ম করা উচিত ছিল, ডিপ্লোমার পরে ন্যূনতম ২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকলে ডুয়েটে ভর্তি নেয়া যাবে না।
আর এই সমস্যাগুলোর কারণেই আজ বুয়েট, রুয়েট ইত্যাদি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের কথা বলার সাহস পাচ্ছে। সুতরাং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করা উচিত।
২. ভাষাগত সমস্যার দ্রুত সমাধানের কাজ করা জরুরি। কারণ, ভাষাগত সমস্যা শুধু একাডেমিক বা কর্মক্ষেত্রের সমস্যা না—বরং এর মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী ভুল পড়ে, ভুল শিখে। বিশ্বাস হয় না? চলুন দেখে আসি।
৩. কেন ভাষাগত সমস্যা ভুল পড়ার অন্যতম কারণ:
আসুন বোঝানোর সুবিধার্থে উদাহরণ দেই।
ধরুন একজন শিক্ষার্থী কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করে এবং তার একটি চ্যাপ্টারের নাম ধরা যাক প্রোগ্রামিং। সেখানে এই প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত যত টার্ম আছে, তার সবগুলো খুঁজলেও কিন্তু বাংলা পাওয়া যায় না বা ব্যবহার করা হয় না। তাহলে এই শিক্ষার্থীকে বাংলা দেওয়া হয় কোথায়? দেওয়া হয় ধরুন একটি টার্ম-এর পরে অন্য একটি টার্ম ব্যবহার হয়েছে, সেখানে বাংলাতে লেখা— (আগের টার্ম “এর পরে Enter প্রেস করে” পরের টার্ম)। উদাহরণ হিসেবে এখানে “এর পরে Enter প্রেস করে” এই লেখার মধ্যেও ইংরেজি ভাষা বাংলা উচ্চারণে লেখা।
মূলত বোঝাতে চাইছি, ডিপ্লোমায় যেখানে যা কিছু লেখা থাকে তার অর্ধেকের বেশি ইংরেজি টার্ম, আবার যতটুকু বাংলা লেখা থাকে সেগুলোর মধ্যেও ইংরেজি শব্দ বাংলা উচ্চারণ। তো এই জগাখিচুড়ি লেখার দরকারটা কী?
যেহেতু একজন শিক্ষার্থী টার্ম বা কমান্ড মুখস্থ করছেই, সেখানে ওই (Next, Enter, After, Press, Click ইত্যাদি শব্দই বইয়ে বেশি দেখা যায়), অতটুকু ইংরেজি দিয়ে পরিপূর্ণ একটি কারিকুলামে রূপান্তর করে দেওয়া যায়। আমার মনে হয় না, এটার জন্য একজন শিক্ষার্থী খুব বেশি সমস্যায় পড়বে। বরং, এতটুকুর জন্য একজন শিক্ষার্থী অন্তত বাইরে দেশে লজ্জাজনক পদে যোগদান করবে না এবং ডিপ্লোমা নিয়ে কটাক্ষ করার সময়ও পরিবর্তন আসবে।
সর্বোচ্চ বড় বিষয় হলো — একজন শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং এবং কথা বলার মত যোগ্যতা অর্জন করে ফেলবে।
লিখা: বখতিয়ার
Leave a Reply